SENBAG FAZIL MADRASAH
SENBAG,NOAKHALI. EIIN : 107499
সাম্প্রতিক খবর
ফাযিল ১ম বর্ষে ভর্তি চলছে। যোগাযোগ: 01309107499 ***
 
১▪ হিংসুটে মন্ত্রীর পরিণতি
 
শিশু কিশোর বন্ধুরা! তোমরা নিশ্চয়ই হিংসা-বিদ্বেষ শব্দ দু'টির সঙ্গে পরিচিত এবং হিংসুটে লোকদের আচরণ সম্পর্কে কমবেশি জানো। হিংসা মানুষের অন্তরের এমন একটি দুরারোগ্য ব্যাধি, যা সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে, সমাজে নানা ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করে। হিংসা-বিদ্বেষের ফলে মানুষ কারো বিরুদ্ধে চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র এমনকি সম্পর্কচ্ছেদ করতেও দ্বিধা করে না। এসব কারণে ইসলাম ধর্মে হিংসার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা. আ.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ কর না, ষড়যন্ত্র কর না এবং সম্পর্ক ছিন্ন কর না। বরং তোমরা আল্লাহতায়ালার বান্দা হিসেবে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও।’
হিংসা এক ধরনের বিষ। প্রথমে এই বিষ হিংসুকের নিজের জীবনটাকে তিক্ত, অতিষ্ঠ এবং বেদনাপূর্ণ করে তুলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়, তারপর ওই বিষ ছড়িয়ে পড়ে পুরো সমাজ ব্যবস্থায়। হত্যা, খুন, রাহাজানি, বিশ্বাসঘাতকতার মতো বিচিত্র সামাজিক সংকটের মূলে রয়েছে এই হিংসার বিষ। পবিত্র কুরআনে তাই এই হিংসাকে মানুষের জন্যে ভয়ংকর হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। সূরা ফালাকের পঞ্চম আয়াতে বলা হয়েছে: “এবং (আশ্রয় চাচ্ছি) হিংসুকের অনিষ্টকারিতা থেকে, যখন সে হিংসা করে।”
বন্ধুরা, হিংসা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা জানলে। রংধনু আসরে আমরা এ সম্পর্কেই একটি গল্প প্রচার করেছি। আর গল্প শেষে আছে ইরান-প্রবাসী বাংলাদেশি বন্ধুর সাক্ষাৎকার।প্রথমেই গল্পটি শোনা যাক-
অনেক অনেক অ-নে-ক দিন আগের কথা। এক বাদশার ছিল দুই মন্ত্রী। এক মন্ত্রীর মন ছিল খুবই ভালো। মানুষের ব্যাপারে খুবই দয়া ছিল তার। কখনো সে কারো ভালো ছাড়া মন্দ চাইত না। পারলে মানুষের উপকার করতো, না পারলে ক্ষতি করত না। কিন্তু অপর মন্ত্রীর মনটা ছিল খুবই হিংসুটে, আরেকজনের ভালো সে দেখতেই পারতো না, অপরের সুখ তার সহ্য হতো না। তার মুখটাও ছিল বেজায় খারাপ।
একজনের মন ছিল সাদা অর্থাৎ পবিত্র আর আরেকজনের মন এবং মুখ দুটোই ছিল কালো মানে অপবিত্র। বাদশা ভালো মন্ত্রীটাকে ভালোবাসতেন। এ কারণে হিংসুটে মন্ত্রী ভালো মন্ত্রীটাকে একেবারেই সহ্য করতে পারত না। দেখতেই পারত না তাকে..দেখার সাথে সাথেই যেন তার চোখে কাঁটা ফুটত।
হিংসুটে মন্ত্রী সবসময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকত- কীভাবে তার বিরুদ্ধে বাদশার কান ভারি করা যায়। ভালো মন্ত্রী কিন্তু হিংসুটে মন্ত্রীর এসব ষড়যন্ত্র আর কূটচাল সম্পর্কে জানত- তারপরও কিচ্ছু বলত না।
একদিন হলো কী- হাতবাঁধা এক লোককে বাদশার কাছে আনা হলো। বাদশা জানতে চাইলেন কী হয়েছে..একে তোমরা কেন এভাবে নিয়ে এসেছ...
সেপাই জবাব দিল: বাদশা হুজুর...এই লোকটা অত্যন্ত খারাপ কাজ করেছে...
বাদশা: কী খারাপ কাজ করেছে..
সেপাই: রাস্তা-ঘাটে..হাঁটে-বাজারে..অলিতে-গলিতে এই লোকটা আপনার বদনাম করে বেড়ায়...আপনি নাকি জালেম বাদশা...জনগণের ওপর আপনি নাকি জুলুম করে বেড়াচ্ছেন...
বাদশা: কী-হ, এত্তো বড় সাহস..আমার রাজ্যে বাস করে আমার নামে বদনামী? এই কে আছিস এক্ষুণি ওকে গলা কেটে হত্যা কর্।
ভালো মন্ত্রী এবং হিংসুটে মন্ত্রী দু’জনেই হাতবাঁধা লোকটার পাশেই দাঁড়ানো ছিল। সেপাইদের একজন যখন জল্লাদকে ডেকে আনতে গেল তখন অভিযুক্ত হাতবাঁধা লোকটি শুরু করে দিল বাদশার বদনাম। বাদশা একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল বলে শুনতে পাচ্ছিল না। বাদশা ভালো মন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
বাদশা: লোকটা বিড়বিড় করে কী বলছে? আবারো আমাদের বদনাম করে বেড়াচ্ছে নাকি?
সদয় ও পবিত্র মনের ভালো মন্ত্রী অভিযুক্ত লোকটার নিরীহ চেহারার দিকে তাকাল। এরপর বাদশার দিকে ফিরে বলল:
ভালোমন্ত্রী: হে ন্যায়পরায়ণ বাদশা! ওই বেচারা আপনার জন্যে দোয়া করছে আর বিড়বিড় করে বলছে, যে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেয়, আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন।
একথা শুনে বাদশার মন ভালো হয়ে গেল। বাদশা খুশি হলেন। তার রাগ মিটে গেল। নিরীহ লোকটাকে সে ক্ষমা করে দিল।
হিংসুক মন্ত্রীটা যখন দেখলো ভালোমন্ত্রীটা বাদশার কাছে সত্য কথাটা গোপন করেছে..তখন সে মনে মনে ভাবলো-
হিংসুটে মন্ত্রী: এটাই প্রতিশোধ নেয়ার মোক্ষম সুযোগ। তার মিথ্যাচার যদি বাদশার সামনে ধরিয়ে দেয়া যায় তাহলে আর যাবে কোথায়, বাদশা নিশ্চয়ই তার ওপর অসন্তুষ্ট হবে এবং নির্ঘাৎ শাস্তি হবে তার... হা.হা..হা....।
এই ভেবে বাদশার দিকে ফিরে বলল:
হিংসুটে মন্ত্রী: বাদশা হুজুর! আপনার সামনে সত্য ছাড়া মিথ্যা বলাটা একদম অনুচিত। আমি সত্য গোপন করব না, হাতবাঁধা লোকটা বিড়বিড় করে আপনাকে গালিগালাজ করছিল..আমি নিজ কানে শুনেছি..
বাদশা একথা শুনে ভীষণ বিরক্ত হলো। হিংসুটে মন্ত্রীর দিকে বিরক্তির সাথে তাকালো। সে ভেবেছিল ভালোমন্ত্রীর মিথ্যাচার ধরা পড়ায় বাদশা রেগে গেছে। কিন্তু না..তার ধারণা ছিল একদম ভুল...
একথা শুনে বাদশা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর হিংসুটে মন্ত্রীর দিকে ফিরে বলল: তুমি যা বলেছ তা সত্যি হলেও ওর কথাটা আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লেগেছে। কারণ ও একটা সৎ উদ্দেশ্যে কথাটা ওভাবে আমাকে বলেছে...আর তুমি একটা অসৎ উদ্দেশ্যে খারাপ মন নিয়ে কথাটা বলেছ...তোমার উদ্দেশ্যটা ভালো ছিল না। মনীষীদের কথা শোনো নি... যেই সত্য ফেৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি করে তা প্রকাশ না করাটাই কল্যাণকর...
বাদশার কথা শুনে খারাপমন্ত্রীর কাচুমাচু করতে লাগল। বাদশা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল: ওই মন্ত্রী হাতবাঁধা নিরীহ লোকটার জান বাঁচানোর জন্যে দয়া দেখিয়ে এভাবে কথাটা বলেছে..তার উদ্দেশ্যটা ছিল লোকটাকে সাহায্য করা। এভাবে কথাটা বলে মন্ত্রী লোকটারও প্রাণ বাঁচিয়েছে, সেইসাথে আমারও মান-সম্মান রক্ষা করেছে। কিন্তু তোমার নিয়তটাই ছিল খারাপ। তুমি চেয়েছ ওই লোকটাকে হত্যা করি..সেইসাথে আমার সম্মানটাও নষ্ট করেছ। লোকটা যেসব খারাপ কথা বলেছে সেগুলো আমাকে শুনিয়ে আমাকেই অসম্মান করেছ।
এরপর বাদশা হাতবাঁধা লোকটাকে ছেড়ে দিতে বলল। শুধু তাই নয়, দয়ালু মন্ত্রীটারে পুরস্কার দিল আর হিংসুক ও খারাপ মনের মন্ত্রীটাকে বরখাস্ত করল।
বন্ধুরা, এ গল্পটি লেখা হয়েছে ইরানের বিখ্যাত কবি শেখ সাদি’র গুলিস্তানের কবিতা অবলম্বনে। এ গল্পের শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে- পরের জন্যে গর্ত খুঁড়লে নিজেকেই আগে সেই গর্তে পড়তে হয়। তাই আমাদের উচিত অন্যের ভালো কামনা করা। আমাদের নবীজী এ সম্পর্কে বলেছেন, অপরের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়াবে না, প্রচার করেও বেড়াবে না বরং প্রত্যেক মানুষের ভেতরকার ভালো গুণগুলোই খুঁজে বেড়াও। আর ইবাদাতের মতো ভালো কাজে প্রতিযোগিতা করো, কখনোই আরেকজনকে হিংসা করবে না, হিংসা খু.উ..ব খারাপ জিনিস।
 
২▪ বুদ্ধিমান ও বুদ্ধিহীন
 
কাছের ও দূরের শিশু-কিশোর বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা? আশাকরি সুস্থ দেহ আর সুন্দর মন নিয়ে ভালোভাবেই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছো। তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছো যে, প্রতিটা ক্লাসে কিছু ছাত্র থাকে যারা যেমন বুদ্ধিমান তেমনি জ্ঞানী। আবার কিছু ছাত্র আছে যাদের স্মৃতি শক্তি একেবারে দুর্বল এবং অনেক পড়াশুনার পরও কিছুই মনে রাখতে পারে না। তাদের মূল সমস্যা হলো বুদ্ধি বা কৌশলের অভাব। তারা যদি সঠিক নিয়মে অর্থাৎ বুদ্ধি খাটিয়ে পড়াশুনা করতো তাহলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। শুধু স্কুলেই নয়, আমাদের সমাজের পরতে পরতে বুদ্ধিমান ও বুদ্ধিহীন এই দুই শ্রেণীর মানুষ দেখা যায়।
মানুষের মস্তিষ্ক যেসব কাজ করে তার সামগ্রিক প্রকাশের নাম বুদ্ধি। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেন, একজন মানুষের মগজের মোট ওজনের ৮০ ভাগই তৈরি হয় জীবনের প্রথম তিন বছরে। তবে মজার ব্যাপার হলো, বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের বুদ্ধি কিছুটা কমে যেতে পারে। মানুষ দু'ভাবে বুদ্ধি লাভ করে থাকে। ১. সহজাত এবং ২. শিক্ষার মাধ্যম। ‘সহজাত' বুদ্ধি হলো- যে বুদ্ধি আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। আর শিক্ষণীয় বুদ্ধি হলো, যা শেখার মাধ্যমে বাড়ানো যায়। তবে বুদ্ধির বড় একটা অংশ নির্ভর করে শেখার পরিবেশ, পদ্ধতি, আবেগ ইত্যাদির ওপর। জন্মের পর প্রথম দিকে প্রোটিন বা জরুরি কোনো খাদ্য উপাদানের ঘাটতি থাকলে পরবর্তীতে বুদ্ধির স্বাভাবিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত হয়। তো বন্ধুরা, আজকের আসরে মাওলানা জালালুদ্দিন রুমীর বিখ্যাত গ্রন্থ মসনবী থেকে ‘বুদ্ধিমান ও বুদ্ধিহীন' দুই ব্যক্তির একটি গল্প শোনাব।
এক দেশে ছিল এক বুদ্ধিমান। তার মাথা ভালো কাজ করলেও ধনসম্পদ কিছুই ছিল না। তার কাজই ছিল হেঁটে হেঁটে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানো। একবার সেই বুদ্ধিমান লোকটি হাঁটতে হাঁটতে এক মরুভূমিতে গিয়ে পৌঁছল। চলার পথে হঠাৎ এক গেঁয়ো পথিকের সাথে দেখা। পথিকটি একটি উটে চড়ে পথ চলছে। উটের পিঠে দুদিকে দুটি বস্তা ঝুলানো ছিল। বুদ্ধিমান লোকটি পথিককে দেখেই একটি লম্বা সালাম দিল এবং বলল: স্বাগতম! সুস্বাগতম!! তোমাকে দূর থেকে দেখেই খুব খুশী হয়েছি আমি। পায়ে হাঁটা আর ক্লান্তির কথা না হয় বাদই দিলাম ভাই, একা একা পথ চলতে গিয়ে একেবারে বিরক্ত হয়ে পড়েছিলাম। এখন যতক্ষণ এক সাথে পথে চলব প্রাণখুলে দু'চারটে কথা বলতে পারব, নাকি বলো?
বুদ্ধিমান লোকটা কথা শুনে পথিক খুশি হল। এরপর বলল: আমিও ভাই একা চলতে চলতে বিরক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত নিজে নিজেই গান গাওয়া শুরু করলাম। তবে ভাই, পায়ে হাঁটা আর উটে চড়ার মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। আসলে পায়ে হাঁটাই ভালো। তাছাড়া তোমার যদি উট, ঘোড়া বা গাধা না থাকে তাহলে তা চোরে নেবার ভয় থাকবে না; ঘাস, লতাপাতা খোঁজারও কোন চিন্তা থাকবে না। কবি ঠিকই বলেছেন-
চিন্তা নেই, ভাবনা নেই, যার নেই গাধা
ঘাস পাতা খড়ের তরে মন নেই বাধা।
বুদ্ধিমান: না ভাই, এটা কেমন কথা! যদি কারো গাধা না থাকে তাহলে তো তার বোঝা নিজের মাথাতেই চাপবে। পথ যদি দূরের হয় তাহলে তো পায়েরই কষ্ট। তবে হ্যাঁ, আমার কিন্তু হেঁটে পথ চলতে তেমন খারাপ লাগে না।
এভাবে নানা বিষয়ে কথা বলতে বলতে তারা পথ চলতে লাগল। হঠাৎ বুদ্ধিমান লোকটির মন- পথিকের উটের দু'পাশে বাধা বস্তা দুটিতে কি আছে তা জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠলো। তাই সে কৌশলে জানতে চাইল : তা ভাই, উটের বোঝা দুটি অনেক ভারী বলে মনে হচ্ছে! বস্তা দুটিতে কি বোঝাই করেছো ?
পথিক: একটিতে রেখেছি গম আর অন্যটিতে বালি আর মাটির ঢেলা।
বুদ্ধিমান: কি বললে! বালি আর মাটির ঢেলা! কিন্তু কেন, তোমার বাড়ীতে কি বালি আর মাটির ঢেলা নেই?
পথিক : তা থাকবে না কেন? আসলে ওসব আমি কোন কাজের জন্য নিচ্ছি না। এক বস্তার বেশী গম ছিল না বলে তা উটের পিঠে কিছুতেই আটকানো যাচ্ছিলো না। তাই বুদ্ধিকরে আরেক বস্তা ভর্তি করলাম বালি আর মাটি দিয়ে; যাতে উটের পিঠে দু'পাশ থেকে বস্তা দুটি ঝুলে থাকে।
বুদ্ধিমান: হা: হা:হা:। আজব বুদ্ধি আবিস্কার করেছো দেখছি। একেবারে বুদ্ধির ঢেঁকি! আরে ভাই, এর চেয়ে ভালো হতো না যদি গমগুলোকে দুটি বস্তায় সমান সমান করে ঢেলে নিতে। তাহলে বস্তা উঠানো-নামানো যেমন সহজ হতো, তেমনি উটের কষ্টও কম হতো।
উটওয়ালা পথিক লোকটির বুদ্ধি-সুদ্ধি আসলেই কম ছিল। তাই পথচারী সঙ্গীর কথা শুনে সে বলে উঠল:
পথিক: বাহ বাহ! সুন্দর বুদ্ধি তো তোমার! শত চিন্তা-ফিকির করেও আমার বুদ্ধি এত দুর পৌছায়নি। বোঝা যাচ্ছে, তুমি সত্যিই একজন বুদ্ধিমান, জ্ঞানী ও মহাপুরুষ।
বুদ্ধিমান: না, না ওসব কিছু না। তবে ভাই এটাতো খুবই সহজ হিসাব।
পথিক: না ভাই, আমি তোমার কথা একদম মেনে নিতে পারছি না। এতোসব আক্কেল বুদ্ধি দিয়ে তুমি নিশ্চয়ই অনেক ধনসম্পদের মালিক হয়েছো। আর এখন সখের বশে হেঁটে হেঁটে সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়াচ্ছো।
বুদ্ধিমান : না ভাই তুমি ভুল বুঝছো। সত্যি বলতে কি, এই দুনিয়ায় আমার একটা কনাকড়িও নেই। এই যে এখন তোমার সাথে চলছি, অথচ আগামীকাল আমার ভাগ্যে কি আছে, কি কাজ করব আর কিইবা খাব তাও জানি না।
পথিক: এ্যাঁ, তুমি দেখছি একেবারে নিঃস্ব, ফতুর মানুষ। কিন্তু আমি একেবারে বুদ্ধিহীন হবার পরও আমার বাড়ীতে ১০টি উট, ১০০টি ভেড়া ও ৫০টি গরু আছো। এছাড়া বাড়ী, জমি, চাকর-বাকর সবই আছে। অথচ এতো বুদ্ধি মাথায় রেখেও তুমি নিঃস্ব ফকীর? তাহলে এতোসব জ্ঞান-বুদ্ধি আর লেখাপড়ার ফায়দা কি? জ্ঞান-বুদ্ধির অর্থ যদি এই হয় যে, ফালতু খেয়াল-খুশিমতো যেদিকে মন যায় সেদিকেই পথ চলব, তাহলে সত্তর বছর মুর্খ থাকাও উত্তম। না, ভাই তোমার মত ফলহীন বুদ্ধিমানের সাথে পথ চলা আমার পক্ষে আর সম্ভব না।
বুদ্ধিমান: ঠিক আছে আমি অন্য পথেই যাচ্ছি। তবে যাবার আগে বলে যাচ্ছি, তুই যেসব ধন-সম্পদ কিনেছিস, তার সবই টাকা দিয়ে কিনেছিস। এতে অহংকার করার কিছু নেই। তবে তুই যে একটা গর্ধভ তা বুঝতে আমার আর বাকী নেই।
একথা বলে পথচারী ভিন্ন পথ ধরে হাঁটা দিল। আর ঘোড়া সওয়ারী সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। কিছুদূর যাবার পর সে এক ডাকাতদলের খপ্পরে পড়ল। ডাকাতদের একজন পথিকের কাছে জানতে চাইল যে, সে বস্তায় করে কি নিয়ে যাচ্ছে। পথিক ডাকাতদের কথার জবাব দিতে যখন ইতস্তত করছিল, তখন এক ডাকাত চাকু বের করে বস্তা দুটির একটি একঘায়ে কেটে ফেলল। ঘটনাক্রমে বস্তাটি ছিল বালি আর মাটির ঢেলার। এসব দেখে ডাকাত দল উটওয়ালাকে কয়েকটি লাথি লাগিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। যাওয়ার সময় বলে গেল :
ডাকাত: তুই আসলেই একটা গাধা। নইলে মরুভুমিতে বাস করেও কেউ কি বালি আর ঢেলা উটের ওপর বহন করে নিয়ে যায়? ডাকাতরা চলে যেতেই পথিক তার গমের বস্তা হাতছাড়া না হওয়াতে হাসিতে ফেটে পড়ল। আনন্দ উল্লাসে বলতে লাগল:
পথিক : এরকম বোকামী হাজার বার করাও ভালো। বোকার মতো বালি আর ঢেলা বোঝাই না করলে আমার কষ্টের উপার্জন গিয়ে পড়তো ডাকাতদের হাতে ।
ওই দিন থেকে বোকা লোকটি একশো উট বোঝাই করলেও একপাশে গম ও অন্যপাশে বালি বোঝাই করতো। কারো বুদ্ধি পরামর্শে কান দিতো না। মানুষ তার বুদ্ধির বহর দেখে হাসি-তামাশা করলে জবাবে সে বলতো, আমি এমন কিছু জানি, যা তোমরা জানো না।
বন্ধুরা, গল্পটি থেকে আমরা দুটি বিষয় শিক্ষা নিতে পারি। প্রথমত : কেবল বুদ্ধিমান হলেই চলে না, সে বুদ্ধিকে কাজে লাগানোর জন্য পরিশ্রম করতে হয়। নইলে অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। অন্যদিকে বোকামী করার পরও ভাগ্য গুনে দু'একবার বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া গেলেও বোকামীকে কেউই পছন্দ করে না। তাই আমাদের সবাইকে বুদ্ধিমান ও পরিশ্রমী হতে হবে। #========#####===

৩▪ বধিরের বিড়ম্বনা

 কাছের ও দূরের শিশু-কিশোর বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা? আশা করি, সুস্থ দেহ আর সুন্দর মন নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি আমাদের অনুষ্ঠানও নিয়মিত শুনে যাচ্ছো। রেডিও, টেলিভিশন, কম্পিউটার কিংবা অন্য কোনো অডিও প্লেয়ারে গান বা অন্যকিছু শোনার সময় খেয়াল রাখতে হবে, শব্দের মাত্রা যেন সহনীয় পর্যায়ের বেশি না হয়। কেননা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা হু’র মতে, 'একনাগাড়ে দীর্ঘক্ষণ উচ্চশব্দে গান শোনা শ্রবণশক্তির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ১২ থেকে ৪৫ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে এর প্রভাব এত বেশি যে, বর্তমান বিশ্বে তরুণ ও মধ্যবয়সী ১১০ কোটির বেশি মানুষ শ্রবণশক্তি হারানোর ঝুঁকির মুখে রয়েছে।'

সংস্থাটির তথ্য মতে, ধনী ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে ব্যক্তিগত অডিও সিস্টেমে উচ্চমাত্রার শব্দ শুনে অর্ধেকের বেশি মানুষ শ্রবণশক্তি হারাচ্ছে।
কোনো কারণে একবার যদি কেউ শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলে তাহলে তাকে নানা রকম অসুবিধার মুখে পড়তে হয়। এক শ্রবণ প্রতিবন্ধী বা বধির ব্যক্তির বিড়ম্বনা সম্পর্কে মাওলানা জালালউদ্দিন রুমীর লেখা একটি গল্প । 
এক দেশে সালমান নামে এক বৃদ্ধ মুদি বাস করত। সে কানে খুব কম শুনত। কানের কাছে গিয়ে খুব জোরে কথা বললেই সে শুনতে পেত। এজন্য লোকজন তাকে কালা বা বধির সালমান বলে ডাকত।
সালমানের পাশে মহল্লায় শাবান নামে এক যুবক বাস করত। শাবানের একটা বদ অভ্যাস ছিল। সে দোকানদারদের কাছ থেকে বাকীতে জিনিস কিনত কিন্তু টাকা দেয়ার বেলায় ফাঁকি দিত। তাই দোকানীরা তার কাছে জিনিসপত্র বিক্রি করত না। একদিন শাবান এল সালমানের দোকানে। সে কিছু জিনিস বাকীতে নিতে চাইল।
বৃদ্ধ সালমান জানত যে, শাবানকে একবার বাকী দিলে সে টাকা আর পাওয়া সম্ভব নয়। তাই সে শাবানকে বলল, আমি বাপু লেখাপড়া জানিনে, বুড়ো মানুষ তাই মনেও রাখতে পারিনে। তাই বাকীতে কোন কিছু বিক্রি করব না।
একথা শুনে শাবানের খুব রাগ হলো। এরপর থেকে সে সব সময় কালা সালমানকে বিরক্ত ও ঠাট্টা মশকরা করত। সে তার বখাটে বন্ধুদের বলত- ‘যা, সালমানের সামনে গিয়ে শব্দ না করে শুধু ঠোঁট নেড়ে নেড়ে কথা বল্। দেখবি বুড়ো কেমন জব্দ হয়।’
শাবানের দুষ্ট বন্ধুরা যখন বুড়ো সালমানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে কথা বলত তখন সে শুনতে না পেরে বলে উঠত- ‘তোমরা কি চাও, একটু জোরে বলো।
তখন শাবান এগিয়ে গিয়ে জোরে বলত, চাচা তুমি বধির নাকি? আমার বন্ধুরা তো তরকারি চাচ্ছে।’
শাবানের কথায় তার বন্ধুরা হেসে উঠত। সালমান এতে বিরুক্ত হয়ে বলত, ‘আমার কাছে তরকারী নেই। এটা তরকারির দোকান নয়, মুদির দোকান।’
শাবানের বখাটে বন্ধুরা বৃদ্ধের কথায় আবারো হাসিতে ফেটে পড়ত। পরদিন শাবান ও তার বন্ধুরা আবারো যেত সালমানের দোকানে। তাদের একজন সালমানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে কথা বলত। সালমান কিছুই শুনতে না পেরে জিজ্ঞেস করলে শাবান এগিয়ে যেত এবং বলতো, ‘চাচা তুমি কি বধির? আমার এ বন্ধু দুই গজ কাপড় চাচ্ছে।’
শাবানের কথায় বন্ধুরা হেসে উঠত। অন্যদিকে বৃদ্ধ মুদি বিরক্ত হতো। একদিন শাবানকে একা পেয়ে বৃদ্ধি মুদি বলল, ‘দেখ্€শাবান! তুই ভালো করেই জানিস যে আমি কানে কম শুনি। কিন্তু তারপরও তুই আমাকে অযথায় কষ্ট দিচ্ছিস কেন? এই যে আমি কম শুনতে পাই, এটা আমার একটা রোগ। এতে আমার অপরাধ কি দেখলি? মনে রাখবি, এভাবে মানুষকে অযথা কষ্ট দিলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।’
বৃদ্ধের কথা শুনে শাবান বলল, ঠিকাছে তোমাকে আর কষ্ট দেব না যদি আমাকে বাকীতে মাল দাও।
শাবানের চালাকি বুঝতে পেরে সালমান বলল- ‘না, কক্ষনো তোকে বাকীতে মাল দেব না।‘ এরপর শাবান বলল, ‘তাহলে আমিও তোমাকে বিরক্ত করতেই থাকব।’
শাবানের কথা শুনে বৃদ্ধ সালমান খুব দুঃখ পেল। এরপর বলল, ‘তুই আমার মত বুড়ো মানুষকে যেভাবে কষ্ট দিচ্ছিস একদিন দেখবি তোরও এ রকম অবস্থা হয়েছে।’
এ ঘটনার কিছুদিন পরের কথা। একদিন শাবান টের পেল, তার কানে কি যেন হয়েছে। সে সবকিছু ভালোভাবে শুনতে পাচ্ছে না। একদিন সে তার পরিচিত লোকের সাথে আলাপ করার সময় কথাবার্তা না শুনেই সে উল্টাপাল্টা জবাব দিয়ে দিল। এতে ওই লোকটি হেসে উঠল এবং বলল, ‘কিরে তুই বধির হয়ে গেলি নাকি?’
এ কথা শুনে শাবান খুব কষ্ট পেল। এরপর থেকে সে কারো সাথে কথাবার্তা বলার সময় সমস্ত মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করত যাতে সঠিক জবাব দিতে পারে এবং উপহাসের পাত্র না হয়। কিন্তু শাবান যতই চেষ্টা করতে লাগল ততই তার কান ভারী হয়ে এলো। দেখতে দেখতে সে সম্পূর্ণ বধির হয়ে গেল।
বধির হয়ে গেলেও সে মানুষকে তা বুঝতে দিত না। একদিন সে জানতে পারল যে, পাশের মহল্লার এক কসাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই তাকে দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। কসাইয়ের বাড়ীর উদ্দেশ্যে যেতে যেতে সে ভাবল, রোগী দেখতে গিয়ে প্রথমে সালাম দেব। সে সালামের জবাব দিলে জানতে চাইব, ওষুধপথ্য কি খাচ্ছো? সে হয়তো বলবে, স্যূপ, বনরুটি কিংবা অন্যকিছু খাচ্ছি। আমি বলব, খুব ভালো ব্যবস্থা। এটাই তোমার উপযুক্ত পথ্য। এরপর জিজ্ঞেস করব, তোমার অবস্থা এখন কেমন? সে নিশ্চয়ই জবাব দেবে, কিছুটা ভালোর দিকে। আমি তখন বলব, আলহামদুলিল্লাহ। এরপর জিজ্ঞেস করব, তোমার ডাক্তার কে? তখন সে নিশ্চয়ই কোন ডাক্তারের নাম বলবে। আমি তখন বলব, তিনি তো খুব ভালো ডাক্তার। এ ঘরে তার শুভাগমন হোক। এরপর খোদা হাফেজ বলে চলে আসব। ব্যস, খুব সোজা কাজ।
বধির শাবান এসব প্রশ্ন-উত্তর মনে মনে তৈরি করে পৌছে গেল কসাইয়ের বাড়ীতে। রোগীর ঘরে প্রবেশ করেই সালাম বিনিময় করল। রোগীর অবস্থা তখন খুব খারাপ যাচ্ছিল। শাবান তার হাত দিয়ে রোগীর বাহু ধরে জিজ্ঞেস করল, চাচা তোমার অবস্থা এখন কেমন, কিছুটা ভালো হয়েছে?
রোগী গোঙাতে গোঙাতে বললো- না বাবা, আমার অবস্থা খুবই খারাপ, একেবারে মরে যাচ্ছি।
শাবান বলল : আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর বহুত শুকরিয়া।
রোগী শাবানের কথা শুনে বিরক্ত বোধ করল। রোগীর পাশে যারা ছিল তারাও বিষ্মিত হয়ে গেল। এরপর শাবান জিজ্ঞেস করল, ওষুধপথ্য কি খাচ্ছো?
রোগীর মেজাজ একেবারে তিরিক্ষি হয়ে গিয়েছিল। তাই সে জবাব দিল, ‘যন্ত্রণা খাচ্ছি, মরণ খাচ্ছি, সাপের বিষ খাচ্ছি।‘
শাবান বলল : ‘খুব ভালো পথ্য। তোমার মতো রোগীর জন্য এসবই উত্তম।‘
শাবানের কথা শুনে রোগীর মেজাজ আরো বিগড়ে গেল। রোগীর এক আত্মীয় বলল, ‘এই ব্যাটা! এসব কি যা-তা বকছিস? রোগীর সাথে তোর কোনো শত্রুতা আছে নাকি?’
শাবান লোকটির কথা কিছুই বুঝতে পারল না। তাই জবাবও দিল না। কিছুক্ষণ পর সে আবারো রোগীকে জিজ্ঞেস করলো, তোমার ডাক্তার কে ভাই?
রোগী রেগে গিয়ে বলল: ‘আজরাইল, আজরাইল আমার ডাক্তার।‘
শাবান বলল, ‘বেশ ভালো ডাক্তার। এ বাড়ীতে তার আগমন শুভ হোক। তার মতো ডাক্তারই হয় না।‘
শাবানের কথা শুনে রোগী চিৎকার করে বলল, ‘এ ব্যাটাকে এখান থেকে ঘাড় ধরে বের করে দাও। এই আহম্মক আমাকে নিয়ে তামাশা শুরু করেছে।‘
ঘরের লোকজন শাবানের হাত ধরে তাকে বাইরে নিয়ে এল এবং বলল, ‘ব্যাটা তুই আস্ত একটা বদমাশ। রোগী তোর সাথে কি দুশমনি করেছে যে, তার সাথে এরকম করছিস?’
রোগীর একজন আত্মীয় এসে শাবানকে ধাক্কা মেরে রাস্তার দিকে ঠেলে দিল। আরেকজন তেড়ে গেল তাকে মারতে। সবার মারমুখী অবস্থা দেখে শাবান হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। সে চিৎকার করে বলে উঠল, ‘তোমরা আমাকে মারতে চাচ্ছো কেন? আমি তোমাদের কি ক্ষতি করেছি?’
হৈ চৈ শুনে পাশের বাড়ী থেকে একজন যুবক বেরিয়ে এল। সে ছিল বুড়ো মুদি সালমানের পুত্র। লোকদের কাছে শাবানের উল্টাপাল্টা জবাব শুনে সে শাবানকে জিজ্ঞেস করল, তোমার নাম কি ?
শাবান ভাবলো যুবক তাকে জিজ্ঞেস করেছে, তুমি এখানে কেন এসেছিলে? তাই সে জবাব দিল, ‘ওই বাড়ীর কসাই বেচারা অসুস্থ তাই তাকে দেখতে এসেছিলাম।‘
শাবানের উল্টাপাল্টা উত্তর শুনে যুবকটি আসল রহস্য বুঝতে পারল।
এরপর যুবকটি পকেট থেকে এক টুকরো কাগজ ও কলম বের করে তাতে লিখল, তুমি কি লেখাপড়া জানো? লেখাটি শাবানের সামনে তুলে ধরতেই সে বলে উঠল, হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি লেখাপড়া জানি।
এ কথা শুনে যুবকটি বুঝতে পারল যে, এ বেচারাও তার বাবার মত কানে কম শুনে কিংবা একেবারেই শুনে না। কিন্তু তার সমস্যা হচ্ছে সে তার অক্ষমতার কথা কারো কাছে ফাঁস করতে চায় না। যুবকটি এবার উত্তেজিত জনতাকে ব্যাপারটি বুঝিয়ে বিদায় করল। এরপর সে কাগজের উপর লিখল, “শোন ভাই, বধির হওয়া কোনো অপরাধ নয়। এতে লজ্জা শরমের কি আছে? আমার বাবা সামলান মুদিও বধির। তাতে কি? এটা তো একটা রোগ। কিন্তু তুমি তোমার দুর্বলতা ঢাকতে গিয়ে মানুষের কথাবার্তার উল্টাপাল্টা জবাব দিয়ে যাচ্ছ। মানুষ এতে কষ্ট পাচ্ছে এবং বিরক্ত হচ্ছে। তার চেয়ে তুমি যদি মানুষকে বলো যে, তুমি কানে শোন না তাহলে কোনো বিপদ নেই। কেউ তোমাকে ভুল বুঝবে না। নিজের অহংকার ত্যাগ করে এখন থেকে বলো যে, আমি বধির। তাহলেই বেঁচে যাবে। নইলে মারধর তোমার ভাগ্যে নিশ্চিত।”
কাগজের লেখাগুলো পড়ার পর শাবানের হুঁশ হলো। সে বলল, “তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। তুমি ঠিকই বলেছে। একসময় আমি তোমার বাবার সাথে ঠাট্টা মশকরা করতাম, তাকে অযথা কষ্ট দিতাম। আজ আমি তওবা করলাম। আর কাউকে মশকরা করব না।”
এরপর থেকে শাবান তার পকেটে সবসময় কাগজ কলম রাখত। যখনি কেউ তার সাথে কথা বলতে আসত, তখনি সে কাগজের ওপর লিখে জানাতে আমি বধির। আমার সাথে কোনো প্রয়োজন থাকলে এই কাগজে লিখে জানান। আমি পড়তে জানি, লেখা পড়ে জবাব দেব। #
========%%%%%%======

৪▪ Facebook সম্পর্কে জনৈক পুত্রের প্রতি পিতার নসীহত।

বাবা দেখলেন ছেলে সারাদিন মোবাইল
নিয়ে বসে থাকে। রাত হলেও না ঘুমিয়ে
ফেসবুকে মগ্ন থাকে।
পরদিন নাস্তার টেবিলে, ছেলেকে
বললেন:
-বাবা!তোমাকে দেখি সারাক্ষণ
ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকতে।
তোমাকে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে
হবে।
না হলে তুমি ভীষণ ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
★ ফেসবুক হলো একটা গভীর সমুদ্র।
এ সাগরে ডুবে অনেক মানুষ মারা
গিয়েছে।
.
★ ফেসবুক ব্যবহারে তুমি মৌমাছির মতো
হবে। মৌমাছি যেমন শুধু মধুওয়ালা ফুলের
ওপর বসে, সেখান থেকে মধু আহরণ করে
অন্যদের উপকার করে।
নোংরা-ময়লা স্থানে বসে না। তুমিও
মৌমাছির মতো ভালো ভালো
পেজগুলোতে যাবে। প্রথমে নিজে উপকৃত
হবে, তারপর অন্যদেরও উপকার করবে।
.
★ বাবা! তুমি মাছির মতো হয়ো না।
মাছি
ভালো-মন্দ সবকিছুর ওপর বসে। অজান্তেই
খারাপ জায়গা থেকে রোগবালাই ছড়ায়।
তুমিও যেই সেই পেজে যেওনা। এতে
তুমিও
ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তোমার বন্ধুরাও
ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
.
★ বাবা! তুমি কোনও লেখায় মন্তব্য করার
আগে, কোনও লেখা শেয়ার করার আগে
চিন্তা করবে, তুমি যা করছো, সেটাতে
আল্লাহ তা‘আলা রাজি হবেন নাকি
নারাজ হবেন। একটা কথা মনে রাখবে,
মুমিনের প্রতিটি কাজই আল্লাহকে
রাজি-খুশি করার জন্য হয়ে থাকে।
আল্লাহ বান্দাকে সৃষ্টিই করেছেন তার
ইবাদতের জন্য।
.
★ অনেকে তোমাকে বলবে, ফেসবুক হলো
আনন্দ-বিনোদনের জায়গা। এখানে এতো
ধর্মের কচকচি ভালো লাগে না। তুমি
তাদের কথায় প্রভাবিত হয়ো না। একজন
মুমিনের সামান্য থেকে সামান্য কাজও
আল্লাহর
সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য ছাড়া হতে পারে না।
নিছক বিনোদন করার জন্য কিন্তু
তোমাকে সৃষ্টি করা হয় নি।
.
★ তোমাকে অনেকে বলবে, ফেসবুকে
আসি কিছুটা সময় মজার করে কাটানোর
জন্য। তুমি তাদের কথায় কান দিও না।
.
★ বাবা! তুমি ফেসবুকে কারো বিরুদ্ধে
কিছু লেখার আগে নিশ্চিত হয়ে নিবে,
তুমি যা জেনেছো বা তুমি যা ভাবছো
সেটার উৎস সঠিক কি না। তুমি কারো
বিরোধিতা করলে, ভদ্র ভাষায় করবে।
তবে এটা নিশ্চিত হয়ে নিবে, তুমি যার
বিরোধিতা করছো, সে তোমার
বিরোধিতা ভালোভাবে নিবে কিনা।
.
★ বাবা! ফেসবুকে এমন মানুষও পাবে,
যারা তোমার ভদ্রভাষার বিপরীতে অভদ্র
ভাষা ব্যবহার করবে। বিষয়ের আলোচনা
বাদ দিয়ে তোমার ব্যক্তিত্ব আর চরিত্র
নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিবে। এমন
লোকের সমালোচনা করা তো দূরের কথা,
প্রশংসাও করার দরকার নেই। এমন
লোককে ফ্রেন্ডলিস্টেও রাখার দরকার
নেই। তুমি আরেক জনের সাথে ইনবক্সে
যা আলোচনা করছো, সেটা স্ট্যাটাসে
প্রকাশ করবে না।
.
★ কাউকে কোনও দোষ ধরিয়ে দিতে
চাইলে ইনবক্সে করবে। সবার সামনে
করবে না।
.
★ বাছা! ফেসবুকে এসে তোমার
চরিত্রকে খুইয়ে বসো না। যদিও তুমি
ছদ্মনামে ফেসবুক ব্যবহার করে থাকো।
আল্লাহ তো গোপন ও প্রকাশ্য সব খবর
জানেন।
.
★ বাবা! কেউ তোমাকে আঘাত করলে
তুমিও তাকে পাল্টা আঘাত করো না।
কেউ তোমাকে গালি দিয়ে মন্তব্য
করলেও তুমি পাল্টা জবাব দিও না। সে
গালি দিয়ে তার প্রকৃত রূপ প্রকাশ
করেছে, তুমিও নিরব থেকে তোমার স্বরূপ
প্রকাশ করো।
.
★ তুমি যা লিখছো, সে স্ট্যাটাস দিচ্ছো,
সে ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। কারণ
তুমিও যেমন তোমার মনের কথা লিখছো,
ফিরিশতারাও তোমার কর্মের কথা
লিখে রাখছেন। আল্লাহ তা‘আলা সবার
ওপর থেকে হিসাব রাখছেন, পর্যবেক্ষণ
করছেন। তুমি এটা ভুলে যেও না, তুমি
একদিন আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে, সেদিন
পাপীদের জন্য অনুতাপ আর অনুশোচনা
ছাড়া কিছুই
থাকবে না।
.
★ বাবা! তোমার ব্যাপারে আমার
সবচেয়ে বেশি আশংকা যেটা হয় সেটা
হলো:
হারাম কিছু দেখা। হারাম কিছু পড়া।
হারাম ও বিকৃত ছবি দেখা। একমাত্র
কলবে সলীম বা সুস্থ-সুন্দর হৃদয় যার আছে
সে-ই একমাত্র এ ভয়াবহ পাপ থেকে
বাঁচতে পারে। তুমি এমন পাপের সম্মুখীন
হলে ইস্তিগফার-আউযুবিল্লাহ পড়ে
তাড়াতাড়ি সরে পড়বে। ঠিক বাঘ
দেখলে যেভাবে পালাও সেভাবে
পালাবে। অন্যথায় জাহান্নাম হবে
তোমার ঠিকানা।
.
★ বাবা! তুমি ফেসবুককে দ্বীনের
প্রচারের জন্যেই ব্যবহার করবে। অন্যকিছুর
জন্য নয়।
.
★ তোমার মনে শয়তান কুমন্ত্রণা দিতে
পারে, একবার বা দুইবার পাপ করলে কিছু
হবে না। পরে তাওবা করে নিলেই হবে।
আচ্ছা! তাহলে তুমি মুমিন হওয়ারই বা কী
দরকার? কাফির হয়ে ইচ্ছা মতো জীবন
যাপন করে, শেষ জীবনে ঈমান আনো,
তাহলে তো আরো
ভালো হয়?
.
★ বাবা! তোমাকে নিয়ে আরেকটা
ভয়াভহ আশংকা যেটা হয় তা হলো: তুমি
ফেসবুকে খারাপ বন্ধুর পাল্লায় পড়তে
পারো। পাপ-পংকিলতায় আকণ্ঠ
নিমজ্জিত বিকৃতমানস কোন পুরুষের
পাল্লায়ও পড়তে পারো।
বাবারে! খুবই সতর্ক থেকো। তুমি তাদের
মিষ্টি কথায় ভুলো না। তাদের মধুমাখা
লেখায় নিশ্চিন্ত হয়ো না।
আল্লাহ তা‘আলা কুরআন কারীমে
বলেছেন:
তোমরা তোমাদের ঘরের দরজা দিয়ে
প্রবেশ করো। (পেছন দরজা দিয়ে প্রবেশ
করো না। )। প্রতিটি কাজই তার সঠিক
পন্থায় করা উচিত।
.
★ বাছা আমার! একজন মানুষের কাছে তার
চারিত্রিক পবিত্রতা থেকে মূল্যবাণ আর
কিছুই নেই। তুমি খেয়াল করলে দেখবে,
দুষ্ট লোকেরা প্রথম প্রথম মেয়েদের
পেছনে
পেছনে ছুটে, তাদের বন্ধুত্ব পাওয়ার
আশায় কাকুতি মিনতি করে। পরে যখন
তাদের মনস্কামনা সিদ্ধ হয়ে যায়, তখন
মেয়েরাই উল্টো তাদের পেছনে পেছনে
ছোটে। আর সেই পাপিষ্ঠ পালিয়ে
বাঁচে।
.
★ বাবা! তুমি একটি মুহূর্তের জন্যও ভুলে
যেওনা, আমরা কেনো সৃষ্ট হয়েছি।
এটা মনে রাখবে, এই জীবনের পর আর
সুযোগ নেই। হয় জান্নাত না হয়
জাহান্নাম।
.
আব্বু! ফেসবুকে কয়েক ধরনের মানুষ
দেখবে:
★ এক: এরা বাস্তব জীবনে খুবই পরিচিত।
বহুলোক তাদেরকে চেনে। এরা
ফেসবুকে এসেও খুবই দ্রুত পরিচিত পেয়ে
যায়। এখানে তাদের চিন্তাধারা প্রকাশ
করে। মানুষ সেটা গ্রহণও করে। তুমি
সাবধান থাকবে, এদের সব চিন্তা কিন্তু
নিরাপদ নয়। হাজার হাজার লাইক দেখে
তুমি বিভ্রান্ত হয়ে পড়ো না। এদের
বেশির ভাগ লাইকই হুজুগে।
-
★ দুই: একদল আছে, তারা বাস্তব জীবনে
খুবই পরিচিত। কিন্তু ফেসবুকে অতটা
সড়গড় নয়। এদের কারো কারো মনে সুপ্ত
ইচ্ছা, আমাকেও ফেসবুকেও মানুষ চিনুক।
জানুক। হাজার হাজার লাইক পড়ুক। কেউ
কেউ আফসোসও করে, কি রে আামাকে
এখানে মানুষ চিনতে পারছে না কেন?
কোন অগা-মগাকে লাইক দিয়ে ভরিয়ে
ফেলছে, অামার দিকে ফিরেও
তাকাচ্ছে না! তুমি এমন অহংকারী,
যশপ্রাথী মোটেও হয়ো না। এটা খুবই
ঘৃণিত একটা মানসিকতা। লাইক-খ্যাতির
পিছে পড়া মানে তুমি আশা করছো,
তোমার শরীরে বনবনে মাছি বসুক!
-
★ তিন: বাস্তব জীবনে মোটেও পরিচিত
নয়। কিন্তু ফেসবুকে রীতিমতো
‘সেলিব্রেটি’। মুহূর্তেই কয়েকশ লাইক
পড়ে যায়। এদের
কারো কারো অহংকারে মাটিতে পা
পড়ে না। তারা মনে মনে কামনা করে,
ইশ! আমাকে আশেপাশের সবাই চিনতে
পারছে না কেন? তারা চেষ্টা আকারে-
ইঙ্গিতে মানুষকে জানান
দিতে: অামি একজন হনুমান! আমি একজন
ফেসবুকের ঘুঁটেপোকা!
বাবা! তুমি এমন দুগন্ধযুক্ত গুবরেপোকার
মতো হয়ো না। মনটাকে লাইক-লালায়িত,
প্রশংসালোভী করে তুলো না। কমেন্ট
মৌমাছি করে ফেলো না! নিজেকে
নোটিফিকেশন-সন্ধানী করে তুলো না।
.
ইয়া আল্লাহ! আমাদেরকে সব ধরণের
পাপ থেকে হিফাযত করুন। আমীন।