SENBAG FAZIL MADRASAH
SENBAG,NOAKHALI. EIIN : 107499
সাম্প্রতিক খবর
ফাযিল ১ম বর্ষে ভর্তি চলছে। যোগাযোগ: 01309107499 ***
Mpo March_2025
Eidul Fitr Bonus 2025
MPO Feb_25
Ad hoc Committee
MPO Jan_2025
e Requisition 6th 2024
Mpo Dec/24
Mpo Nov-2024
MPO Oct_2024
Mpo Sep/2024
সাময়িক সনদ ও নম্বরপত্র উত্তোলনের জন্য অনলাইন আবেদনের নিয়মাবলী
স্বচ্ছতা নীতিমালা 31(07/2024
TAX Prottoyon 2024
MPO JULY_2024
NTRCA) এর আওতা বহির্ভূত পদসমূহে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনায় মহাপরিচালক মহোদয়ের প্রতিনিধি মনোনয়নের ক্ষে
জন্মতারিখ সংশোধনের নিমিত্ত তথ্য প্রেরণ
MPO JUN_2024
Routine Alim 2024
Eidul Azha 2024
Mpo May 2024
MPO April-2024
Eidul Fitor-2024
Boishakhi-2024
MPO March-2024
MPO Feb-2024
MPO JAN_2024
MPO Dec_2023
ফাযিল ১ম বর্ষ ভর্তি ফরম
ছুটির তালিকা 2024
MPO NOV_2023
TAX_bANK_ Prottoyon
MPO Oct_2023
সর্বশেষ অধিভুক্তি 30-06-2027
মাদ্রাসার এমপিও শীটে পদবী ও বিষয় সংযোজন/সংশোধন
MPO Sep_2023
মূল কিতাব থেকে পাঠদান ও ক্লাসে আরবি বলা
IAU New Providhan_2023
Mpo Aug_2023
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের মেয়াদ ০১বছর।
Provisional Certificate Online Application circular.pdf
MPO JULY_2023
MPO JUN_2023
ল্যাব সহকারী পদে নিয়োগের নিমিত্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রত্যয়ন এর নমুনা
Eid Bonus Azha_2023
বেসরকারি মাদরাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কমৃচারীদের সাময়িক বরখাস্ত সংক্রান্ত।
ইবতেদায়ী প্রধান পদে নিয়োগ সংক্রান্ত
Bonus Eid Ul Fitor_2023
অনূর্ধ্ব ০৬ (ছয়) মাস পর্যন্ত বকেয়া বেতন-ভাতা প্রাপ্তির আবেদন অনলাইনে (মেমিস সফটওয়্যারে) দাখিল প্রসঙ্
নিয়োগ পদ্ধতি অনুসরণ
MPO_MAY_2023
Mpo April_2023
MPO_Feb_23
MPO_March_2023
MPO_JAN_2023
Fazil Reg_Card 2020/21
Class Routine Map_07-09-22
MPO_Dec_2022
২০২৩ সালের ছুটির তালিকা ও শিক্ষাপঞ্জিকা
Fee_2023
Class 06 to 08 ধারাবাহিক শূল্যায়ন ফরম
স্বীকৃতি নবায়ন _30-06-2027
Mpo_Nov_2022
1st Sikrity_09-02-1942
Fazil Test Exam_2021 Routine
বার্ষিক পরীক্ষার রুটিন-২০২২
শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ওয়ালটন সার্ভিস সেন্টারে যোগাযোগ করার ঠিকানা
Mpo-Oct_2022
মাদরাসার নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্যের প্রতিনিধি মনোনয়নের আবে
মাদরাসার নিয়োগ বোর্ডে মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মনোনয়নের আবেদনের কাগজ পত্র ও তথ্যাদি
Moo-তে নাম সংশোধন
Mpo- তে জন্ম তারিখ সংশোধন
ইনডেক্স সংশোধন
MPO SEp/2022
মাদ্রাসার এমপিও শীটে পদবী ও বিষয় সংযোজন/সংশোধনের নিমিত্ত মাদ্রাসা ভিত্তিক আবেদন দ্রুত প্রেরণ প্রসঙ্গ
 অফিস সহকারী নিয়োগ পদ্ধতি
যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা
নবসুষ্ট পদে সহ: মৌলভী(ক্বারী) ও প্রভা: গণিত নিয়োগ
MPO August_2022
e-Requisition_2022
এমপিও শীটে পদবী ও বিষয় সংযোজন/সংশোধনের আবেদন দাখিল সংক্রান্ত
GB Copy until 30-03-2025
২৫% বিদ্যুৎ ব্যবহার কম সংক্রান্ত তদারকি টিম
উৎসে কর কর্তনের প্রত্যয়ন-২০২২
MPO_JULY_2022
MPO_JUN_2022
নন জুড়িশিয়াল স্ট্যাম্প BMEB
Eid_Ul_Azha_2022 MPO
Mpo আবেদন ই-রিকুইজিশন কপি সাবমিট
নিজস্ব প্যাডে স্মারক-তারিখ & প্রধানের স্বাক্ষরের সাথে নাম, ই-মেইল, মোবাইল নং, উল্লেখকরণ, পত্রগ্রহণ
MPO_May_2022
বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ম্যানেজিং কমিটি এন্ড গভর্নিং বডি প্রবিধানমালা-২০০৯
MPO_April_2022
Eid_Ul_Fitr_2022
Boishakhi Vata_2022
জনবল কাঠামোর আংশিক সংশোধন- ১২-০৫-২০২১
MPO_March_2022
About Bank Non Drawal Circular
পদবী ও বিষয়
MPO_JAN_2022
MPO_DEC_2021
2022 সালের ছুটির তালিকা
MPO_Nov_2021
ADC_ICT_Library_Report_28 July 2021
Paid Tax_Bank copy_2020_21
MPO_Oct_2021
সহ. মৌলভী (ক্বারী) নিয়োগ
ইবি প্রধান নিয়োগ
MPO_Sep, 2021
স্বীকৃতি ৮ বছর
স্বীকৃতি BMEB 30-06-2022
MPO July, 2021
MPO আগস্ট-2021
কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি ১৫ মার্চ ২০২২
MPO_JUN_2021
Institute 1st MPO
কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি ২৫/০৯/২০২১ পর্য়ন্ত
Mpo January- 2021
Mpo (Online 1st MPO) March - 2020
MPO নীতিমালা-২০১৮ (সংশোধিত) ২৩/১১/২০২০
সৃষ্টপদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ১৯/১২/২০১৯
আয় ব্যয় হিসাব ফর্ম (DIA)
কমিটি 30-03-2025 পর্য়ন্ত
MPO_Feb_2023
জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ বিস্তারিত গেজেট
বেতন স্কেল ২০১৫‘র গেজেট সংশোধন
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার মাদ্রাসার জনবল নিয়োগের পরীক্ষা অনুষ্ঠান
অধিভুক্তি নবায়ন কপি ৩০-০৬-২০২৩ পর্যন্ত
পরীক্ষা চলাকালীন ক্লাস নেয়ার আদেশ
যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি-২০১৯
Circular about No cell phone in class room
IAU_Probidhan_22-01-2020
জিপিএ সমমান সংশোধনী
জিপিএ সমমান

بسم الله الرحمن الرحيم 

তাকওয়া/ খোদাভীতি

                                                  - মোঃ জাকির হোসেন (ভাইস প্রিন্সিপাল)

সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর । আমরা শুধু তাঁরই প্রশংসা করি এবং তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি ও তাঁর নিকট ক্ষমা চাই। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দিবেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারবে না। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না এবং আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।

শরিয়তের পরিভাষায় তাকওয়া
আল্লামা রাগেব আসফাহানী রহ. বলেছেন, তাকওয়ার শরয়ী অর্থ হলো : “যাবতীয় গোনাহ থেকে অন্তরকে রক্ষা করা। আর গোনাহ বর্জন সম্ভব হবে সকল সন্দেহজনক বস্তু পরিত্যাগের দ্বারা। এবং তা পূর্ণতা লাভের লক্ষ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বৈধ বস্তুও পরিহার করা।”
এ অর্থেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস ঃ “হালালের বিষয়টি যেমনিভাবে মানুষের নিকট স্পষ্ট। ঠিক তেমনি হারামের বিষয়টিও মানুষের নিকট স্পষ্ট।” [সহিহ বুখারি : হা. ৫২]
আল্লামা জুরজানি রহ.ও অনেক সুন্দর বলেছেন, ‘আল্লাহর আনুগত্যের ক্ষেত্রে তাকওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা। আর গোনাহের ক্ষেত্রে তাদ্বারা উদ্দেশ্য হলো যাবতীয় অন্যায় পরিত্যাগ ও তা থেকে দূরত্ব অবলম্বন করে চলা। [“আল মুফরাদাত”, আল আসফাহানী : পৃ. ৫৩০]

মুত্তাকিগণের পরিচয়
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা মুত্তাকিগণের পরিচয় উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন- “এই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই, তা মুত্তাকিদের জন্য হিদায়াত স্বরূপ। (যাদের পরিচয় হলো) তারা পরকালে বিশ্বাসী, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং আমার দেয়া রিজিক থেকে ব্যয় করে। আর তারা আপনার ও আপনার পূর্ববর্তী অবতীর্ণ বিষয়ে বিশ্বাসী এবং আখেরাতের প্রতিও ঈমান আনে। (জেনে রাখবে) তারাই তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সৎপথ প্রাপ্ত এবং তাঁরাই সফল।” [আল বাকারা : ১-৫]
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন- “আর পূর্ব-পশ্চিমে মুখ ফিরানোতে কোন কল্যাণ নেই। তবে কল্যাণ লাভকারী একমাত্র তারা যারা আল্লাহ তাআলা, পরকালে, ফেরেশতাগণ, আসমানী কিতাবসমূহ এবং নবীগণের প্রতি ঈমান এনেছে। আর তাঁরাই আল্লাহকে ভালবেসে নিকটাত্মীয়, অসহায়, গরীব, মুসাফির, অভাবি এবং দাসমুক্তিতে সম্পদ ব্যয় করে। আর নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত আদায় করে এবং নিজেদের অঙ্গিকার পূর্ণ করে, আর বিপদ ও কষ্টে ধৈর্য ধারণ করে। (আল্লাহর নিকট) তারাই প্রকৃত সত্যবাদী এবং প্রকৃত খোদাভীরু।” [আল বাকারা : ১৭৭]
হাদিসে রাসুলে : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “কোন বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত মুত্তাকি হতে পারবে না। যতক্ষণ না সে সন্দেহযুক্ত বস্তুতে জড়িয়ে যাবার ভয়ে, সন্দেহমুক্ত বস্তু পরিত্যাগ করে।” [জামে তিরমিযি : হা. ২৪৫১]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন-  “তিন বস্তুর ক্ষেত্রে তাকওয়া অবলম্বন করা দরকার। এক. বংশ মর্যাদার ক্ষেত্রে। দুই. ধন-সম্পদের ক্ষেত্রে। তিন. মান-মর্যাদার ক্ষেত্রে। [জামে তিরমিযি : হা. ৩৬৭১]
সালফে সালেহীনের (নেককার পূর্বসূরী) দৃষ্টিতে
১. আব্দুল্লাহ বিন জুবাইর রা. এর নিকট একটি পত্র এল। যাতে লেখাছিল, ‘মুত্তাকিদের কিছু চিহ্ণ রয়েছে। যদ্বারা তাদেরকে চেনা যায়। এবং তাঁরা নিজেরাও তা উপলব্ধি করতে পারে। এক. বিপদে ধৈর্য ধারণ করা। দুই. তাকদিরের ওপর সন্তুষ্ট থাকা। তিন. নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করা। চার. কুরআনী বিধানের সামনে নিজেকে পূর্ণরূপে সঁপে দেওয়া।’ [আদ দুররুল মানছুর ফিত তাফসিরিল মাছুর, সুয়ূতি : ১/৫৭]
২. ওমর বিন আব্দুল আজিজ রহ. বলেছেন- ‘সারাদিন রোজা রাখা এবং সারারাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার নাম তাকওয়া নয়; বরং তাকওয়া হলো আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয় পরিত্যাগ করা।’
৩. মায়মুন বিন মিহরান রহ. বলেছেন- ‘কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মুত্তাকি হতে পারবে না। যতক্ষণ না সে নিজের ব্যাপারে নিজ পরশি থেকেও বেশি হিসেবী হয়। (অর্থাৎ) তার খাবার, তার পোষাক এবং তার পানীয় কোথা থেকে এল, বৈধ স্থান থেকে না অবৈধ স্থান থেকে? (সবকিছুর হিসেব কষে নেওয়া)।
৪. সাঈদ বিন মুসায়্যিব রহ. বলেছেন- মুত্তাকি ঐ ব্যক্তি যে গোনাহ হওয়া মাত্রই তাওবা করে। (এমনকি) গোনাহ না  হলেও তাওবা করে।’
৫. আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম জাওযী রহ. বলেছেন- ‘কোন ব্যক্তি মুত্তাকি হতে হলে তার মাঝে চারটি গুণের সমাবেশ ঘটতে হবে, তন্মধ্যে একটি হলো- অত্যধিক আল্লাহ অভিমুখী হওয়া। আর তা অর্জন হবে গোনাহ ছেড়ে আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করার মাধ্যমে। কিংবা উদাসিনতা ছেড়ে আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন হওয়ার দ্বারা।’ [“আল ফাওয়াইদ”, ইবনুল কাইয়্যিম জাওযিয়াহ : পৃ. ৫৬-৫৮]
৬. ত্বল্ক বিন হাবীব রা. কে তাঁর ছাত্ররা অনুরোধ জানাল যে, আপনি অল্প কথায় আমাদের সামনে তাকওয়ার কিছু পরিচিতি তুলে ধরুণ।
তিনি বললেন- ‘তাকওয়া হলো, আল্লাহ তাআলার রহমতের আশায় তাঁর আনুগত্য করা। আর তাঁর শাস্তির ভয়ে তাঁর অবাধ্যতা পরিহার করা। [মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, ১১/২৩]
৭. সুফিয়ান ছাওরি রহ. বলেছেন- ‘সাহাবাগণকে মুত্তাকি নামে ভূষিত করার একমাত্র কারণ হলো, তারা এমন বিষয়ে ভয় করে চলতেন যা সাধারণত পরিহার করা হয় না।’ [আদ দুররুল মানছুর ফিত তাফসিরিল মাছুর, সুয়ূতি : ১/৫৮]
৮. আব্দুল্লাহ বিন মোবারক রহ. বলেছেন- ‘যদি কোন ব্যক্তি একশটি বস্তু পরিহার করে চলে। আর একটি মাত্র বস্তুর ক্ষেত্রে অবহেলা করে। তবে সে পরিপূর্ণ তাকওয়া লাভ করতে পারেনি। [প্রাগুক্ত : ১/৫৮]
তাকওয়া : গুরুত্ব ও ফজিলত
মানব জীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ রাসুল সা. ও তাঁর হাতে গড়া সাহাবাগণ এবং যুগে যুগে আল্লাহর প্রিয়বান্দাগণ তাকওয়ার যে দৃষ্টান্ত পেশ করে গিয়েছেন, তা এ বিষয়টির গুরুত্ব হাজারো গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এবং যা আমাদের আমলী জীবন সুসংগঠিত করার জন্য যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। অথবা তার বাস্তব প্রয়োগ আমাদের জীবনে এসে গেলে আমাদের জীবনও হয়ে উঠবে তাঁদের জীবনের মত অনেক সুন্দর। আমরাও তাঁদের মত চির স্মরণীয় হয়ে থাকবো সবার হৃদয়ে, ঠিক যেমন রয়েছেন তাঁরা। তাই হাদিসের কিতাবগুলো অনুসন্ধান করলে দেখা যায় যে, প্রিয় নবী মোহাম্মদ সা. অসংখ্য হাদিসে তাঁর প্রিয় উম্মতকে এই অমূল্য সম্পদটি হাসিল করার জন্য  উৎসাহিত করেছেন। এবং কিছু জায়গায় জোর তাগীদ ও করেছেন। তন্মধ্য থেকে কিছু হাদিস পাঠকের সামনে তুলে ধরছি :
১. এক হাদিসে এসেছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অধিক জান্নাতে প্রবেশকারী বক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বললেন, দুই ধরণের ব্যক্তি- এক. খোদাভীতি। দুই. সৎচরিত্রবান ব্যক্তি। [জামে তিরমিযি : হা. ৬১৬]
২.আবুযর গিফারি রা. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কিছু উপদেশ দানের অনুরোধ জানালে রাসুল সা. বললেন- আমি তোমাকে  তাকওয়ার উপদেশ দিচ্ছি কেননা তা সকল ইবাদতের মূল।” [“আল মুজামুল কাবীর”, তাবারানী : ২/১৬৮]
৩. এক হাদিসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তুমি একমাত্র মুমিনকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে। আর তোমার খাবার যেন একমাত্র মুত্তাকি বান্দাই খায়।” [সুনানে আবু দাউদ : হা. ৪৮৩২]
৪. অপর হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা খোদাভীরু, ধনী, বিনয়ী বান্দাকে বেশি পছন্দ করেন।” [সহিহ মুসলিম : হা. ২৯৬৫]
৫. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, “যে ব্যক্তি সন্দেহপূর্ণ বস্তু এড়িয়ে চলবে, তার দীন-ধর্ম, মান-সম্মান সবই নিরাপদ থাকবে।” [সহিহ বুখারি : হা. ৫২]
অনুরূপ আমাদের নেকার ও মুত্তাকি পূর্বসূরী সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তবে তাবেয়িন সকলেই অত্যন্ত মূল্যবান বাণী উপহার দিয়ে গেছেন, যেগুলো আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পাথেয় হিসেবে কাজ করবে এবং তাকওয়ার পথে আমাদেরকে প্রেরণা যোগাবে। পাঠকদের সুবিধার্থে সেসব বাণী থেকে কিছু উল্লেখ করছি :

১. মুয়াজ বিন জাবাল রা. বলেছেন, “কিয়ামতের দিন সকল মানুষকে একটি ময়দানে একত্রিত করা হবে। হঠাৎ একজন ঘোষক ঘোষণা করবেন, মুত্তাকিগণ কোথায়? এরপর তারা আল্লাহর পার্শ্বে একত্র হবে। এ সময় আল্লাহর মাঝে আর তাদের মাঝে কোন  পর্দা বা আড়াল থাকবে না।” [তাফসিরু ইবনে কাছির : ১/১১৯]
২. কাতাদা রহ. বলেছেন- “আল্লাহ তাআলা জান্নাত সৃষ্টি করার পর জান্নাতকে লক্ষ্য করে জিজ্ঞাসা করলেন-
তুমি কি কিছু বলবে? জান্নাত উত্তর দিল, খোদাভীতি অর্জন কারীদের জন্য আমার পক্ষ থেকে মোবারকবাদ।” [“আদ দুররুল মানছুর ফিত তাফসিরিল মাছুর”, সুয়ুতি : ১/৫৯]
৩. আব্দুল্লাহ বিন আউফ রহ. এক ব্যক্তিকে বিদায় দেবার সময় বললেন, ‘তোমার জন্য আবশ্যক হলো, আল্লাহ তাআলাকে ভয় করা। কারণ আল্লাহ ও মুত্তাকি বান্দার মাঝে কোন একাকিত্ব নেই।’ [‘আল ফাওয়াইদ’, ইবনুল কাইয়্যিম জাওযীয়াহ : পৃ. ১৩৫]
৪. যায়েদ বিন আসলাম রহ. বলতেন, যে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে, মানুষ নিজ থেকেই তাকে ভালবাসবে। যদিও তাকে তারা অপছন্দ করে। [প্রাগুক্ত]

তাকওয়ার সুফল
আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারিমে মুত্তাকিগণকে ২৬টি সুসংবাদ দান করেছেন।
১. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সম্মান ও মর্যাদা লাভের সুসংবাদ।
এরশাদ হচ্ছে- “যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে তাঁদের জন্য রয়েছে বিশেষ সম্মানের সুসংবাদ।” [সুরা ইউনুস : ৬৩-৬৪]
২. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা লাভের সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলা বলেন- “নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য মুত্তাকিগণের সাথেই রয়েছে।” [সুরা আননাহল : ১২৭]
৩. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞালাভের সুসংবাদ ।
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে, “যদি তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো, তবে তিনি তোমাদেরকে বিশেষ জ্ঞান দান করবেন।” [সুরা আনফাল : ২৯]
৪. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে পাপমোচন ও মহাপ্রতিদানের সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলার বাণী, “আর যে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে। তিনি তার পাপ মোচন করেন এবং তাকে মহাপ্রতিদান দেন।” [সুরা তলাক : ৫]
৫. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে গুনাহ মাফের সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলার বাণী- “এবং তোমরা আল্লাহ তাআলাকে ভয় করো। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সুরা আনফাল : ৬৯]
৬. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে প্রতিটি কাজে সহযোগীতা লাভের সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলার বাণী- “আর যে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে। তিনি তার কঠিন বিষয়কে সহজ করে দেন।” [সুরা তলাক : ৪]
৭. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সংকট হতে মুক্তি লাভের সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলার বাণী- “আর যে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে। তিনি তাকে মুক্তির পথ বেড় করে দেন।” [সুরা তলাক : ২]
৮. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে দুশ্চিন্তামুক্ত প্রশস্ত রিজিকের সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলার বাণী- “এবং তিনি তাকে অকল্পনীয় স্থান থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করেন।” [সুরা তালাক : ৩]
৯. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে শাস্তি হতে পরিত্রাণ লাভের সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলার বাণী- “অতঃপর আমি মুত্তাকিদেরকে মুক্তি দেই।” [সুরা মারয়াম : ৭২]
১০. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে উদ্দেশে সফলতা দানের সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলার বাণী- “নিশ্চয় সফলতা একমাত্র মুত্তাকিদের জন্য।” [সুরা নাবা : ৩১]
১১. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে  নেক কাজের যোগ্যতা এবং পবিত্র জীবন লাভের  সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলার বাণী- “আর সৎলোক তারা, যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী……. এবং তারাই একমাত্র মুত্তাকি।” [সুরা বাকারা : ১৭৭]
১২. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সত্যবাদীতার সনদ লাভের সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলার বাণী- “তারাই ঐসকল লোক যারা সত্যবাদী এবং তারাই মুত্তাকি।” [সুরা বাকারা : ১৭৭]
১৩. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সম্মানের উচ্চ আসন লাভের সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলার বাণী- “তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সম্মানিত হলেন মুত্তাকিরা।” [সুরা হুজুরাত : ১৩]
১৪. আল্লাহ তাআলার ভালবাসা লাভের সুুসংবাদ। আল্লাহ তাআলার বাণী- “নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মুত্তাকিদেরকে ভালবাসেন। [সুরা তাওবা : ৪]
১৫. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সফলতা লাভের সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলার বাণী- “তোমরা আল্লাহ তাআলাকে ভয় কর। অবশ্যই তোমরা সফল হবে।” [সুরা আলে ইমরান : ১৩০]
১৬. আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভের সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলার বাণী- “কিন্তু একমাত্র তোমাদের তাকওয়াই তাঁর নিকট পৌঁছে। [সুরা হজ্জ : ৩৭]
১৭. আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে শ্রমের স্বীকৃতি লাভের সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলার বাণী- “নিশ্চয় যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং ধৈর্য ধারণ করে। আর নিশ্চয় আল্লাহ সাৎকর্মশীলদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না।” [সুরা ইউসুফ : ৯০]
১৮. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আমল কবুলের সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলার বাণী- “আল্লাহ তাআলা একমাত্র মুত্তাকিদের আমলই কবুল করেন।” [সুরা মায়িদাহ : ২৭]
১৯. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অন্তরের পবিত্রতা লাভের সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলার বাণী- “আর এটাই অন্তরের পবিত্রতা।” [সুরা হজ্জ : ৩২]
২০. আল্লাহর পক্ষ থেকে ইবাদতে পূর্ণতা লাভের সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলার বাণী- “তোমরা আল্লাহ তাআলাকে পরিপূর্ণভাবে ভয় কর।” [সুরা আল ইমরান : ১০২]
২১. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে জান্নাত ও প্রস্রবণ লাভের সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলার বাণী- “নিশ্চয় মুত্তাকিগণ জান্নাত ও প্রস্রবণের মাঝে থাকবে।” [সুরা আয যারিয়াত : ১৫]
২২. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বিপদ-আপদ হতে মুক্তি লাভের সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলার বাণী- “ নিশ্চয় মুত্তাকিরা থাকবে নিরাপদ স্থানে।” [সুরা আদ দুখান : ৫১]
২৩. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সকল সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভের সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলার বাণী- “যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে। তারা কিয়ামতের দিন সাফল্যের শীর্ষে অবস্থান করবে।” [সুরা বাকারা : ১১২]
২৪. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে শাস্তি হতে নিরাপত্তা দানের সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলার বাণী- “আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করেছে। তাদের কোন ভয় নেই আর তারা দুঃখিতও হবে না।” [সুরা আরাফ : ৩৫]
২৫. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অনুগত স্ত্রী লাভ করার সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলার বাণী- “নিশ্চয় মুত্তাকিদের জন্য রয়েছে সফলতা, ঘন বাগান, আঙ্গুর এবং অল্পবয়স্কা কুমারী নারী।” [সুরা নাবা : ৩১-৩৩]
২৬. আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভের সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলার বাণী- “নিশ্চয় মুত্তাকিরা সর্বোচ্চ শক্তির অধিকারী বাদশাহের নিকটবর্তী নিরাপদ আসনে বাগান ও প্রস্রবণের মাঝে থাকবে।” [সুরা কমার : ৫৪-৫৫]
[“বাসায়িরু যাবিত তাময়ীঝ ফী লাতায়িফি কিতাবিল আযীয”, আলফায়রুযা আবাদী : ২/৩০১-৩০৩] রিসালাতুল মুসতারশিদীনের টীকা : পৃ. ১৪৯]

তাকওয়া কেমন হওয়া উচিত
১.আব্দুল্লাহ বিন শাখির রা. বলেন, রাসুল সা. নামাজে দাঁড়ালে তাঁর বুকের ভেতর ফুটন্ত গরম পানির পাতিলের মত গড়গড় শব্দ হতো।” [সুনানে আবু দাউদ : হা. ৮৯০]
২. আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা. বলেন, ‘রাসুল সা. গভীর রজনীতে নামাজে এত বেশি পরিমাণ সময় ব্যয় করতেন যে, তাঁর কদম মোবারক ফুলে যেত, রাসুল সা. আল্লাহ তাআলার দরবারে কেঁদে কেঁদে এই দোয়া করতেন, “হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে আপনার এমন ভীতি দান করুন, যা আমাদের ও আমাদের গোনাহের মাঝে অন্তরাল হয়। এবং এমন আনুগত্য দান করুন, যা আমাদেরকে জান্নাতে পৌঁছাতে সহায়ক হয়।” [জামে তিরমিযি : হা. ১২৬৮]
৩. একদা জিবরাঈল আ. আল্লাহর রাসুল সা. এর দরবারে ক্রন্দনরত অবস্থায় উপস্থিত হলেন । রাসুল সা. তাঁকে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম সৃষ্টি করার পর থেকে আমার দু’চোখ শুকায় নি এ ভয়ে যে, না জানি আমি আল্লাহর নাফরমানি করে ফেলি।” [সুওয়ারুন মিন হায়াতিল আম্বিয়া ওয়াস সাহাবা ওয়াত তাবিয়িন”, মাহমুদ আল মিসরী : ১/১৩১]
৪. বর্ণিত আছে, দাউদ আ. কে লোকেরা প্রতিদিনই সেবা শশ্র“সার জন্য আসতো এ ভেবে যে, তিনি অসুস্থ। অথচ তা ছিল মুলত আল্লাহ তাআলাকে অধিক ভয় করার ফলাফল। [প্রাগুক্ত : ১/১৩১]
৫. ঈসা আ. যখন আল্লাহ তাআলার কথা স্মরণ করতেন। তখন তাঁর শরীর পুরো রক্তিম বর্ণ ধারণ করতো। [প্রাগুক্ত : পৃ. ১/১৩১]

 

তাকওয়া : কিছু শিক্ষণীয় ঘটনা
১. নবী করিম সা. বলেছেন, অতীত যুগে এক ব্যক্তি সীমাহীন পাপ কর্মে জড়িয়ে পড়ে। অবশেষে তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলে সে তার সন্তানদেরকে ডেকে বললো, আমি যখন মারা যাবো, তখন তোমরা আমাকে আগুনে জ্বালিয়ে আমার পুড়া দেহকে পিষে তা বাতাসে উড়িয়ে দিবে। আল্লাহর শপথ! যদি তিনি আমাকে ধরতে পারেন তবে এমন শাস্তি আমাকে দিবেন, যা ইতিপূর্বে কাউকে দেননি। অতঃপর লোকটি মারা গেলে অসিয়ত মত সবই করা হলো। ওদিকে আল্লাহ তাআলা জমিনকে নির্দেশ দিয়ে বললেন, তার (লোকটির) যে যে অংশ যেখানে যেখানে আছে আমার সামনে উপস্থিত করো। জমিন নির্দেশ মত তাকে উপস্থিত করলো। আল্লাহ তাআলা তাকে জিজ্ঞেস করলেন। কিসে তোমাকে এমন কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করলো?
সে জবাব দিলো, আপনার ভয় হে প্রভু! এ জবাব শুনামাত্রই মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।” [ফতহুলবারি : ৭/৩৩২, হা. ৩৪৮১]
২.একবার আব্দুল্লাহ বিন মোবারক রহ. শাম দেশে অবস্থানকালে এক ব্যক্তি থেকে নিজ প্রয়োজনে একটি কলম ধার নিলেন। কিন্তু লোকটিকে কলমটি ফেরত দিতে ভুলে গেলেন। অতঃপর যখন তিনি মারওয়ায় (মক্কায় অবস্থিত একটি পাহাড়)  অবস্থান করছিলেন।
দেখতে পেলেন কলমটি তাঁর সাথেই রয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমি তৎক্ষণাৎ শামে ফিরে গেলাম এবং মালিককে কলমটি ফিরিয়ে দিলাম। [তারিখে বাগদাদ”, খতীব বাগদাদী : ১০/১৬৭]
৩. একদা ইমাম আবু হানিফা রহ. আপন কর্মচারীকে কিছু ত্র“টিযুক্ত কাপড় দিয়ে বিক্রয়ের জন্য পাঠালেন। সাথে বলে দিলেন যে, কাপড়গুলো বিক্রয়ের সময় যেন ত্র“টিও বর্ণনা করা হয়। কর্মচারী বাজারে গিয়ে কাপড় বিক্রয় করলো ঠিক, তবে দোষ বর্ণনা করতে ভুলে গেল। আর ক্রেতাও বিষয়টি জানলো না। অবশেষে এ কথা ইমাম সাহেব রহ. জানতে পেরে বিক্রিত মূল্য ৩০ হাজার দিরহাম সদ্কা করে দিলেন। এবং অসতর্কতার কারণে কর্মচারিকে বরখাস্ত করলেন। [“আল খায়রাতুল হিসান ফি মানাকিবিল ইমাম আবি হানিফাতা আন নুমান”, ইবনে হাজার, পৃ. ৪৩]
৪. একদিন ইমাম শামসুদ্দিন যাহাবী রহ. কোন প্রয়োজনে একটি পাহাড়ের কোন একটি জায়গা খনন করছিলেন। হঠাৎ দিনার ভর্তি একটি কলশি বেড়িয়ে এলো, তাঁর স্ত্রীও তাঁর সাথে খনন কাজে সহযোগিতা করছিল। তৎক্ষণাৎ তিনি স্ত্রীকে বললেন, “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিয়ুন” এ দেখি মহাবিপদ। সাথে সাথে স্থানটি পূর্বের মত ভরাট করে দিলেন। আর স্ত্রীকে বললেন, হয়তো তার কোন মালিক আছে যাদেরকে আমরা চিনি না। তাই তুমি এমর্মে অঙ্গিকার বদ্ধ যে, ঘটনাটি কাউকে বলবে না। তাঁরা উভয়ই ছিলেন নেককার তাই শত দরিদ্রতা ও প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও এমন দামী জিনিস রেখে তাঁরা বাড়ি ফিরে গেলেন। [“শাযারাতুয যাহাব”, ইবনুল ইমাদ : ৫/৪০৬]
৫. শায়েখ মাহমুদ মিসরী বলেন, আমাদের উস্তাদগণ ঘটনা শোনাতেন যে, মিসর থেকে আগত জামিআ আযহারে পড়–য়া এক ছাত্র কোন এক শায়খের দরসে অংশগ্রহণ করতো। একসময় তার খরচের টাকা আসতে বিলম্ব হচ্ছিল। ফলে সে কিছু রুটি আর কয়েক লোকমা খাবারের খোঁজে শায়খের দরস ত্যাগ করে বাইরে বের হয়ে পড়লো। যাতে সামান্য কিছু পাথেয় সংগ্রহ হয়। সে পথ চলছিলো, হঠাৎ মনের অজান্তেই একটি সংকীর্ণ গলিতে প্রবেশ করল। এরপর দেখতে পেলো সেখানে একটি ঘরের দরজা উন্মুক্ত এবং ভিতরে বিপুল খাবার রয়েছে। তিনি সে খাবার নিয়ে মুখে দিতেই পরক্ষণে মনে হলো। আমি তো ইলম অর্জনের জন্য এসেছে। আর ইল্ম হলো আল্লাহর জ্যোতি। তাই মালিকের অনুমতি ছাড়া এ খাবার ভক্ষণ করা নিজের ওপর জুলুম বৈ নয়। কারণ আলো আর অন্ধকার একত্র হতে পারে না। অবশেষে সে ক্ষুধা নিয়েই শায়খের দরসে উপস্থিত হলো। দরস শেষ হওয়ার পর এক মহিলা এসে শায়খের সাথে কিছু কথা বললো, যা সম্পর্কে উপস্থিত কারোরই জ্ঞান ছিল না। অতঃপর শায়খ ছাত্রটিকে লক্ষ্য করে বললো, এই আল্লাহর বান্দা! তোমার কি বিবাহের আগ্রহ আছে? সে বললো হুজুর, আপনি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন? আমি আজ তিনদিন যাবত ক্ষুধার্ত। আমার দ্বারা বিবাহ করা কীভাবে সম্ভব? শায়খ বললেন, আগন্তুক মহিলাটি আমাকে বললো, তার স্বামী ইন্তেকাল করেছে তবে সে মারা যাওয়ার সময় একটি কন্যা ও অঢেল ধন-সম্পদ রেখে গিয়েছে। এখন তিনি আপন মেয়েকে কোন এক সৎছেলের হাতে তুলে দিতে চান। যে তার মেয়েকে বিবাহ করে পুরো সংসার দেখা-শোনা করবে এবং সম্পদগুলোকে কাজে লাগাবে। একথা শোনে ছেলেটি বললো, তাহলে আমি রাজি। এরপর শায়খ ছাত্রসহ মহিলা ও উপস্থিত সবাইকে নিয়ে মহিলার বাড়িতে উপস্থিত হলেন। ঠিক সে বাড়িতে যেখানে গিয়ে ইতিপূর্বে ছেলেটি খাবার মুখে দিয়ে ছিলো। যখন খাবার উপস্থিত হলো তখন ছেলেটি কেঁদে দিলে শায়খ তাকে জিজ্ঞেস করল, বৎস! তুমি কাঁদছো কেন? আমরা! তোমাকে বাধ্য করলাম না তো?
সে বললো, না। আমি কাঁদছি আনন্দে, কারণ কয়েকদিন পূর্বে আমি ঠিক এই খাবারগুলোই গ্রহণের জন্যে এ বাড়িতে প্রবেশ করে ছিলাম যা আজ আমার সামনে উপস্থিত। তখন আমি খাবারগুলো একারণে পরিত্যাগ করি যে, এটি তো আমার জন্য বৈধ নয়। অবশেষে আমি তা গ্রহণ না করেই ফিরে আসি। আর এখন আল্লাহ সেই খাবারই সাথে আরো অনেক দামী জিনিষ (স্ত্রী) হালাল পন্থায় দান করলেন আলহামদুলিল্লাহ। [সুওয়ারুন মিন হায়তিল আম্বিয়া ওয়াস সাহাবা ওয়াত তাবেয়িন”, মাহমুদ আল মিসরী : ২/৪৯২]

 ইরশাদ হচ্ছে-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ :102

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাকে ভয় কর আর সাবধান, মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’’ (আলে ইমরান:১০২)

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا ﴿70﴾ يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا ﴿71

‘‘হে ঈমানদার গণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক সত্য কথা বল, তিনি তোমাদের আমল সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে।’’ (আল আহযাব:৭০-৭১)


(حديث موقوف) أَخْبَرَنَا أَخْبَرَنَا أَبُو نَصْرِ بْنُ قَتَادَةَ ، ثناأَبُو أَحْمَدَ الْحَافِظُ ، أنا أَبُو الْعَبَّاسِ الثَّقَفِيُّ ، ثنا قُتَيْبَةُ ، قَالَ : ثنا الْخُنَيْسِيُّ يَعْنِي مُحَمَّدَ بْنَ يَزِيدَ بْنِ خُنَيْسٍ ، عَنْعَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ أَبِي رَوَّادٍ ، عَنْ نَافِعٍ ، قَالَ : خَرَجَ ابْنُ عُمَرَفِي بَعْضِ نَوَاحِي الْمَدِينَةِ وَمَعَهُ أَصْحَابُ لَهُ ، وَوَضَعُوا سَفْرَةً لَهُ ، فَمَرَّ بِهِمْ رَاعِي غَنَمٍ ، قَالَ : فَسَلَّمَ ، فَقَالَ ابْنُ عُمَرَ : هَلُمَّ يَا رَاعِي ، هَلُمَّ ، فَأَصِبْ مِنْ هَذِهِ السُّفْرَةِ ، فَقَالَ لَهُ : إِنِّي صَائِمٌ ، فَقَالَ ابْنُ عُمَرَ : أَتَصُومُ فِي مِثْلِ هَذَا الْيَوْمِ الْحَارِّ شَدِيدٍ سُمُومُهُ وَأَنْتَ فِي هَذِهِ الْجِبَالِ تَرْعَى هَذَا الْغَنَمَ ؟ فَقَالَ لَهُ : أَيْ وَاللَّهِ ، أُبَادِرُ أَيَّامِي الْخَالِيَةَ ، فَقَالَ لَهُ ابْنُ عُمَرَ وَهُوَ يُرِيدُ يَخْتَبِرُ وَرَعَهُ : فَهَلْ لَكَ أَنْ تَبِيعَنَا شَاةً مِنْ غَنَمِكَ هَذِهِ فَنُعْطِيكَ ثَمَنَهَا وَنُعْطِيكَ مِنْ لَحْمِهَا فَتُفْطِرَ عَلَيْهِ ؟ فَقَالَ : إِنَّهَا لَيْسَتْ لِي بِغَنَمٍ ، إِنَّهَا غَنَمُ سَيِّدِي ، فَقَالَ لَهُ ابْنُ عُمَرَ : فَمَا عَسَى سَيِّدُكَ فَاعِلا إِذَا فَقْدَهَا ، فَقُلْتَ : أَكْلَهَا الذِّئْبُ ، فَوَلَّى الرَّاعِي عَنْهُ وَهُوَ رَافِعٌ أُصْبُعَهُ إِلَى السَّمَاءِ ، وَهُوَ يَقُولُ : أَيْنَ اللَّهُ ؟ قَالَ : فَجَعَلَ ابْنُ عُمَرَ يُرَدِّدُ قَوْلَ الرَّاعِي ، وَهُوَ يَقُولُ : قَالَ الرَّاعِي : فَأَيْنَ اللَّهُ ؟ قَالَ : فَلَمَّا قَدِمَ الْمَدِينَةَ بَعَثَ إِلَى مَوْلاهُ فَاشْتَرَى مِنْهُ الْغَنَمَ وَالرَّاعِي فَأَعْتَقَ الرَّاعِيَ ، وَوَهَبَ منهُ الْغَنَمَ " 

প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) একদা মদীনার উপকন্ঠে বের হলেন। তখন তাঁর সাথে তাঁর কিছু সাথীরাও ছিল। সাথীরা খাবারের জন্য দস্তরখানা বিছালেন, তখনই ঐদিক দিয়ে এক রাখাল অতিক্রম করছিল। ইবনে উমর (রাঃ) তাকে বললেন,

“হে রাখাল! এসো আমাদের সাথে বসে তুমিও কিছু খাও ও পান কর।” -রাখাল বলল, আমি রোযাদার, ইবনে উমর (রাঃ) বললেন, “এমন প্রচন্ড গরমের দিনে তুমি রোযা রাখছ যখন আবহাওয়া অত্যন্ত গরম এবং এ পাহাড়ে তুমি বকরী চড়াচ্ছো।”
রাখাল বলল, “হ্যাঁ আমি ঐ শূন্য দিনের প্রস্তুতি নিচ্ছি যখন আমল করার সুযোগ থাকবে না, তাই আমল করে নিচ্ছি।”
ইবনে উমর (রাঃ) রাখালের আল্লাহ ভীতি পরীক্ষা করার জন্য তাকে বললেন, “তুমি তোমার এই বকরীর পাল থেকে একটা বকরী বিক্রি করবে? আমরা নগদ মূল্যে তা কিনব এবং তোমার ইফতারের জন্য এখান থেকে গোশতও দিব।”
-রাখাল বলল, “এ বকরীর পাল তো আমার নয়, যে আমি তা থেকে বিক্রি করব, বরং তা আমার মালিকের তাই আমি এখানে হস্তক্ষেপ করতে পারব না।”
ইবনে উমর (রা) বললেন, “তোমার মালিক যদি কোন বকরী কম পায় তাহলে বলবে একটি বকরী হারিয়ে গেছে তখন সে আর কোন কিছু বলবে না। কেননা পাল থেকে দু একটা বকরী পাহাড়ে হারিয়ে থাকে।”
একথা শোনা মাত্র রাখাল ইবনে উমর (রাঃ) এর নিকট থেকে বের হয়ে গেল এবং স্বীয় আঙ্গুল আকাশের দিকে উঠিয়ে বলল, “আল্লাহ কোথায়?”যখন রাখাল চলে গেল তখন ইবনে উমর (রাঃ) এ বাক্যটি বারবার বলতে লাগলেন, ‘আল্লাহ কোথায়?’ ‘আল্লাহ কোথায়?’
যখন আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) মদীনায় ফিরত আসলেন তখন রাখালের মালিকের নিকট নিজের লোক পাঠিয়ে তার কাছ থেকে ঐ বকরীর পাল সহ রাখালকে কিনিয়ে নিলেন, আর তাকে মুক্ত করে দিয়ে বকরীর পাল তাকে দান করে দিলেন। (সূত্র :সুনানে বায়হাকী ,হাদিসঃ ৫২৯১, উসুদুল গাবাহ, হাদিসঃ ৩০৮৬)
তাকওয়াই বা খোদাভীতি ও গোনাহের ভয়ই মানুষকে পাপ থেকে দূরে রাখে। তাই সুন্দর সমাজ, সুদ-ঘুষ, জিনা-ব্যাভিচার মুক্ত সমাজ পেতে চাইলে আমাদের তাকওয়া অবলম্বন করতে হবে। আর আল্লাহর কাছে তারাই অধিক প্রিয়, যারা অধিক তাকওয়াবান, হোক সে রিক্সাওয়ালা, ভ্যানওয়ালা, রাখাল কিংবা ধনী। কারণ আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন- ‘নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত সে যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়াবান’ -(সূরা আল হুজুরাত:১৩)

عن ابن عمر قال سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يحدث حديثا لو لم أسمعه إلا مرة أو مرتين حتى عد سبع مرات ولكني سمعته أكثر من ذلك سمعت رسول الله صلى الله عليه  وسلم يقولم كان الكفل من بني إسرائيل لا يتورع من ذنب عمله فأتته امرأة فأعطاها ستين دينارا على أن يطأها فلما قعد منها مقعد الرجل من امرأته ارعدت وبكت فقلا ما يبكيك أأكثرهتك قالت لا ولكنه عمل ما عملته قظ وما حملني عليه إلا الحاجة فقال تفعلين أنت هذا وما فعلته اذهبي فهي لك وقال لا والله لا أعصي الله بعدها أبدا فمات من ليلة فأصبح مكتوبا على بابه أن الله قد غفر للكفل.

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক দুইবার বা পাঁচ-সাতবার নয়, বরং এর চেয়েও বহুবার আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, বনী ইসরাইলে কিফ্ল নামে এক ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিল। সে কোনোরূপ গুনাহের কাজ ছাড়তো না।

একবার এক মহিলা (অভাবে পড়ে) তার কাছে এল, সে ব্যভিচারের শর্তে তাকে ষাটদিনার (স্বর্ণমুদ্রা) দিতে রাজি হলো (নিরুপায় হয়ে মহিলাটিও রাজি হয়ে গেল)। কিফ্ল যখন (নির্জনে) ওই মহিলার সাথে তার শর্ত পূরণে উদ্যত হলো তখন মহিলাটি (আল্লাহর ভয়ে) প্রকম্পিত হয়ে কেঁদে ফেললো। লোকটি বলল, কাঁদছ কেন? তোমাকে কি আমি জবরদস্তি করছি? মহিলা বলল, না। তবে এ গুনাহের কাজ আমি কখনো করিনি। আজ শুধু অভাবের তাড়নায় এতে বাধ্য হয়েছি।

লোকটি বলল, অভাবের তাড়নায় পড়ে এসেছ, অথচ কখনও তা করনি? যাও, তোমাকে ছেড়ে দিলাম। দিনারগুলোও তোমারই। সে আরো বলল, আল্লাহর কসম, ভবিষ্যতে আমিও কখনও আল্লাহর নাফরমানী করব না। সে রাতেই কিফ্ল মারা গেল। সকালে দেখা গেল তার ঘরের দরজায় লেখা- 

أن الله قد غفر للكفل ‘ আল্লাহ তা’আলা কিফ্লকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। (সুনানে তিরমিযী ২/৭৬)

সুবহানাল্লাহ! মহিলার কী অপূর্ব খোদাভীতি! বস্তুত আল্লাহ-ভীতিতে যাদের হৃদয় পরিপূর্ণ থাকে এবং গোনাহ পরিহার করার ব্যাপারে যাদের বিবেক সদা জাগ্রত থাকে, তাদের হালত এমনি হয়ে থাকে।

এ কারণেই হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, তাকওয়া হলো অন্তরের বিষয়। অন্তরে খোদাভীতি থাকলে কর্মে তার প্রভাব পরিলক্ষিত হবেই।

তাকওয়া অর্থ বাঁচা, আত্মরক্ষা করা, নিষ্কৃতি লাভ করা, ভয় করা। অর্থাৎ আল্লাহর ভয় ও তাঁর সন্তুষ্টি লাভের আশায় অপরাধ, অন্যায় ও আল্লাহর অপছন্দনীয় কথা ও কাজ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার নাম তাকওয়া। একবার হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.)-কে হজরত ওমর (রা.) তাকওয়ার স্বরূপ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেছেন, ‘হে ওমর, পাহাড়ের দুই ধারে কাঁটাবন, মাঝখানে সরু পথ। এমতাবস্থায় কিভাবে চলতে হবে?’ হজরত ওমর (রা.) জবাব দিলেন, ‘গায়ে যেন কাঁটা না লাগে, সাবধানে পথ চলতে হবে।’ হজরত কাব (রা.) বললেন, ‘এটাই তাকওয়া।’

হজরত ওমর (রা.)-এর জীবনের আরো একটি ঘটনা থেকে তাকওয়ার মর্ম উপলব্ধি করা যায়। খলিফা থাকা অবস্থায় তিনি লোকজনের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য রাতের বেলা অলিগলিতে বের হতেন। এক রাতে তাহাজ্জুদের পর তিনি হাঁটছেন। হঠাৎ দেখলেন, একটি ঘর থেকে কথাবার্তার শব্দ শোনা যাচ্ছে। সাধারণত কারো ব্যক্তিগত কথা আড়ি পেতে শোনা বৈধ নয়, কিন্তু দায়িত্বশীল ব্যক্তির জন্য প্রয়োজনে তা বৈধ। কথাবার্তার ধরন দেখে ওমর (রা.)-এর কৌতূহল জন্মে। তিনি ঘরের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়ালেন। তিনি শুনতে পেলেন, এক বৃদ্ধা তার মেয়েকে বলছে, ‘বেটি! আজ তো উটের দুধ কম হয়েছে। এত অল্প দুধ বিক্রি করে দিন গুজরান করা কষ্টকর হবে। তাই দুধের সঙ্গে একটু পানি মিশিয়ে দাও।’

মেয়ে জবাব দিল, ‘মা! আমিরুল মুমিনিন তো দুধের সঙ্গে পানি মেশাতে নিষেধ করেছেন?’ বৃদ্ধা বললেন, ‘আমিরুল মুমিনিন কি আমাদের দেখছেন? তিনি হয়তো নিজ ঘরে ঘুমিয়ে আছেন। তুমি নিশ্চিন্তে পানি মেশাতে পারো।’ এ কথার জবাবে মেয়ে বলল, ‘মা, আমিরুল মুমিনিন এখানে নেই এবং তাঁর কোনো লোকও নেই। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তো আছেন! তিনি তো দেখছেন! তাঁঁর কাছে আমরা কী জবাব দেব?’

ওমর (রা.) দেয়ালের ওপাশ থেকে সব কথা শুনতে পাচ্ছিলেন। এতটুকু শুনেই তিনি চলে এলেন। পরদিন লোক পাঠিয়ে সে ঘরের খোঁজখবর নিলেন। তারপর বৃদ্ধার কাছে পয়গাম পাঠালেন—‘আপনি সম্মত হলে আপনার মেয়ের সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে দিতে চাই।’

এভাবে তাকওয়ার বদৌলতে মেয়েটি আমিরুল মুমিনিনের পুত্রবধূ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে। এই বরকতময় ঘরের তৃতীয় পুরুষে জন্মগ্রহণ করেন খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.), যাঁকে পঞ্চম খলিফায়ে রাশেদ বলা হয়।

আসলে মানুষের অন্তরে সর্বক্ষণ এই ধ্যান জাগ্রত থাকা যে ‘আল্লাহ আমাকে দেখছেন’—এর নামই তাকওয়া। মাহে রমজান মানুষের মধ্যে এমনই বিশ্বাস বদ্ধমূল করতে চায়। তাই মাহে রমজান মূলত তাকওয়া ও খোদাভীরুতার প্রশিক্ষণের মাস।

তাকওয়ার গুরুত্ব বোঝাতে পবিত্র কোরআনে প্রায় আড়াই শর বেশি আয়াত আনা হয়েছে। কেবল সুরা বাকারায়ই প্রায় ৩০ বার তাকওয়া শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে। তাকওয়াই হলো ইবাদতের প্রাণশক্তি। এ জন্য পবিত্র কোরআনে প্রতিটি বিধিবিধানের পরই তাকওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তাকওয়াবিবর্জিত ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ শুধু মুত্তাকিদের আমল কবুল করেন।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ২৭)